অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছে। কিন্তু জয় করে নিয়েছে বাংলাদেশসহ বিশ্ব ক্রিকেট বোদ্ধাদের মন। একটা সময় ৩০০ এর উপরে রান দেখলে আমরা ধরেই নিতাম শতরানের বেশি ব্যাবধানে হারতে হবে। বাংলাদেশি সমর্থকদের মানসিকতার পরিবর্তন দেখেই বুঝা যায় গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের উন্নতির ধারা। ৩৮২ রানের টার্গেট দেখেও এদেশের মানুষ আশা করেছিলো, স্বপ্ন দেখছিলো আমরা পারবো। ক্রিকেটাররাও শেষ পর্যন্ত লড়ে আশা দেখেয়েছিলেন। এরপরও নিশ্চিত হার এড়াতে পারিনি আমরা। ক্রিকেটারদের ঢালাও ভাবে আমরা বাংলাদেশিরা আর কাঠগড়ায় দাড় করাই না৷ তবে ময়নাতদন্ত শেষে অসংখ্য ভুলগুলো এড়িয়ে যাওয়াও সম্ভব নয়।
খেলার পাতার ময়নাতদন্তে বেড়িয়ে এসেছে বাংলাদেশের হারের পেছনে যে যে বিষয় জড়িত।
১) বাজে ফিল্ডিংঃ
বোলিং, ব্যাটিং দুটোরই অনেক দুষ ছিলো তবুও আজকের হারের পেছনে সবচেয়ে বেশি দায়ী বাংলাদেশের বাজে ফিল্ডিং।
একজন বোলারের দায়িত্ব কম রান দেয়া সাথে উইকেট নেয়া। কোন বোলারই প্রতিটা উইকেট এলবিডব্লিউ বা বোল্ড আউট করতে পারে না৷ ক্যাচ গুলা কিন্তু ফিল্ডারদের নিয়ে বোলারকে সাহায্য করা লাগে। ভালো ফিল্ডিং মানে অযথা রান হতে না দেয়া, ক্যাচ গুলা ধরা।
আমরা এখানেই পিছিয়ে ছিলাম। বাংলাদেশ অনেক গুলা ক্যাচ ও রান আউট মিস করেছে। এগুলা কাজে লাগাতে পারলে এরকম সেট হতে পারতো না। এতো রান আসতো না। আবার তাদের হাতে উইকেটও কম থাকতো।
সবচেয়ে বড় বিষয় ভালো ফিল্ডিং দেখলে বোলারদের আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় এবং ব্যাটসম্যাবদের কমে।
বাজে ফিল্ডিংয়ের মিছিলে গত কাল সবচেয়ে বাজে ফিল্ডিং করেছেন সম্ভবত সাব্বির। অথচ এই সাব্বিরকেই বাংলাদেশের সেরা ফিল্ডার ভাবা হয়। যদি সাব্বির ওয়ার্নারের প্রথম ক্যাচ নিতে পারতেন তাহলে ফলাফল অন্যরকম হতে পারতো৷ বা ধরুন ৭০ রানে থাকাকালীন ক্যাচটার কথা? এছাড়াও সাব্বির কমপক্ষে ১টা নিশ্চিত রান আউট মিস করেছেন।
তবে রুবেলের থ্রুতে রান আউটটা কিন্তু অসাধারণ ছিলো৷ এরকম অসাধারণ ফিল্ডিং যদি সারা ম্যাচে হতো তবে ফলাফল ভিন্ন হতে পারতো।
২) বাজে বোলিংঃ
বাংলাদেশের বোলাররা প্রথম থেকে ওইরকম সুযোগ তৈরী করতে পারেন নি এটাও অস্বীকার করার উপায় নাই। লাইন লেংথ মেনে ও বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং করলে অনেক বেশি সুযোগ তৈরী হয়। কিন্তু আমরা এখানেও পিছিয়ে ছিলাম। অস্ট্রেলিয়া প্রথম থেকেই ৬ এর আশপাশে গড় রেখে এগিয়েছে। তাদের লক্ষ্য স্পষ্ট ছিলো৷ ৪০ ওভার পরে উইকেট হাতে রাখা ও শেষে হাত খুলে খেলা। তারা সফল ছিলো৷ বাংলাদেশ মাঝে টানা ৪-৫ ওভার যদি রান আটকে রাখতে পারতো তাহলে অস্ট্রেলিয়া চাপে পড়তো মেরে খেলতো। আমরা পুরো ম্যাচেই পারিনি এই কাজ করতে। শেষের ১০ ওভারে অস্ট্রেলিয়া তুলেছে ১৩১ রান৷ যখন কোন দল হাত খুলে খেলে তখন বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ের দরকার পড়ে। কিন্তু আমরা মার খেয়েও বুদ্ধি খাটাতে পারিনি৷ বরং অনেক বেশি ফুলটস বল দিয়েছি।
৩) ১১৬ টি ডট বলঃ
বাংলাদেশের ব্যাটিংটা অসাধারণ ছিলো নিঃসন্দেহে। এতো বড় রান তাড়া করে ভেঙে না পড়ার জন্য আমাদের ক্রিকেটারদের বাহবা দিতেই হবে। কিন্তু একটা বিষয় খেয়াল করলে আফসোস বাড়বে বৈ কমবে না। ইস! যদি আরেকটু স্ট্রাইক রোটেট করে কম ডট বল দিয়ে খেলতে পারতাম!!
বাংলাদেশ ৩৩৩ রান নিতে স্কোর করেছে ১৮৪ টি বলে। ১১৬ টি ডট! এখানেই আমরা পিছিয়ে পড়েছি। অস্ট্রেলিয়া ডট খেলেছে ১১১ টি। সরাসরি হিসেবে আমরা ৫ টি বেশি ডট খেলেছি। কিন্তু এটাও ভুলে গেলে চলবে না অস্ট্রেলিয়ার অনেক হার্ডহিটার আছে যা আমাদের নেই। তাই আমাদের সিংগেল ডাবলসের দিকে বেশি মনোযোগ দেয়া উচিত ছিলো। যদি আমরা আরোও ৩০ টা ডট কম দিয়ে ওইগুলাতে রান করতে পারতাম? তাহলে হয়তো বাজে ফিল্ডিং বোলিংয়ের পরও জয় হতো আমাদের।
৪) সাইফ ও মোসাদ্দেকের অভাবঃ
এ ম্যাচে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি মিস করেছে বোধহয় এ দুজনকে। একজন বিশ্বকাপের দলের সেরা উইকেট টেকার। অন্যজন বিকল্প অফ স্পিনার। দুইজনই ইনজুরির জন্য দলের বাহিরে ছিলেন। সাইফুদ্দিন রান দেয়ার ক্ষেত্রে বেশ খরুচে হলেও প্রতিটা ম্যাচেই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ব্রেকথ্রু এনে দিচ্ছিলেন। যেটা আজকে সৌম্য ছাড়া কেউ পারেননি। তাই আজকে সাইফুদ্দিন থাকলে হয়তো অন্যরকম ব্যাপার হতো। আর মোসাদ্দেকের তো আজকে অবশ্যই দরকার ছিলো। প্রথম দিকের বাহাতি ব্যাটসম্যানের ভিড়ে ডান হাতি অফস্পিনার অধিনায়কের জন্য ভালো অস্ত্র হতে পারতেন। মাহমুদুল্লাহ এখনো বল করার মতো অবস্থায় নাই। তাই মোসাদ্দেকই এতোদিন এই দায়িত্ব পালন করছিলেন। অধিনায়কের কন্ঠেও ব্যাপারটি ফুটে উঠেছে।
ময়নাতদন্ত শেষে আমরা বলতে চাই,
বাংলাদেশের এই পরাজয় আমাদের সামনে যাওয়ার একটা অনুপ্রেরণা হয়েই থাকবে। নিজেদের দলীয় সর্বোচ্চ ইনিংস খেলেছি হাতে ২ উইকেট রেখে সেটাও বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে রান তাড়া করে! আমরা প্রতিটা ম্যাচেই সামনে এগিয়ে যাওয়ার ছাপ রেখে যাচ্ছি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, সামনেও অনেক ভালো কিছু অপেক্ষা করছে।
1 Comment