২০০৭ বিশ্বকাপের দলের অধিনায়ক ছিলেন হাবিবুল বাশার। আগের বছরে তাঁর নেতৃত্বে ২৮ ওয়ানডের মধ্যে ১৮টি জেতে বাংলাদেশ দল। এই ফরম্যাটে ওই বছর ফর্মে ছিলেন শাহরিয়ার নাফীস, আফতাব আহমেদ, মোহাম্মদ আশরাফুল, সাকিব আল হাসান এবং অধিনায়ক নিজেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপে ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো পরাশক্তিদের হারানোয় সেটি কী প্রভাবকের ভূমিকাই না রেখেছিল সে সময়।
এক যুগ পরে আরেক বিশ্বকাপ স্কোয়াড ঘোষণার সুযোগ পান হাবিবুল বাশার। তবে এবার সেবারের মতো ফর্মে নেই তার নির্বাচিত দল টি। ব্যাটসম্যানদের ফর্মহীনতা ভাবিয়ে তুলেছে সাবেক এ ব্যাটসম্যানকে। তবু স্কোয়াড নির্বাচনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে আগ্রহী নন। পরীক্ষিতদের ওপর আস্থা রেখেছেন তিনি। সে আস্থার প্রতিদান এবারের ব্যাটসম্যানরা দিতে পারবেন তো?
এই ব্যাপারে কাল দল ঘোষণার পর হাবিবুল বাশার বলেন “ব্যাটসম্যানদের ফর্মে না থাকাটা আমাদের জন্য উদ্বেগের। সে কারণেই বিশ্বকাপ স্কোয়াড দিতে এত দেরি হয়েছে। নইলে নিউজিল্যান্ডেরও আগে প্রথম দেশ হিসেবে স্কোয়াড দিয়ে দিতে পারতাম।’
১৫ সদস্যের দলে শেষ পর্যন্ত পরীক্ষিতদের ওপর আস্থার কারণটাও জানান- “অনেক আলোচনা হয়েছে এ নিয়ে। শেষ পর্যন্ত আমরা আস্থা রেখেছি তাদের ওপর। বিশ্বকাপ মাথায় রেখে এ দলটিকে আমরা তৈরি করতে সময় লেগেছে প্রায় দুই বছর। সেখানে নিউজিল্যান্ড সিরিজ ও প্রিমিয়ার লিগের পারফরম্যান্স দেখে কিভাবে কাউকে বাদ দিই আমরা!” বলেছেন- হাতিবুল বাশার।
বিশ্বকাপ স্কোয়াডের ১৫ জনের মধ্যে ৯ জনকে ধরা যায় ব্যাটসম্যান হিসেবে। তাঁদের মধ্যে সাকিব আল হাসান বিপিএল ফাইনালের ইনজুরির কারণে যেতে পারেননি নিউজিল্যান্ডে। এরপর আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে মাত্র একটি ম্যাচ খেলেছেন তিনি, যেখানে আবার ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাননি।
তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদ উল্লাহ খেলেননি ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ। এর আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে ব্যাটিংয়ে তেমন ভালো করতে পারেন নি কেও। সৌম্য সরকারও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ওয়ানডেতে তেমন ভালো কিছু করতে পারেন নি। এরপর প্রিমিয়ার লিগে আবাহনীর হয়েও ভালো করতে পারেন নি । ৯ ম্যাচের মধ্যে ফিফটি নেই কোনো টিতে।
লিটন দাশের অবস্থা খানিকটা ভালো। মোহামেডানের হয়ে ভাল কিছু ম্যাচ খেলেছেন। যদিও কিউইদের বিপক্ষে ওয়ানডেতে ১, ১ ও ১ রানে আউট হওয়ার দুঃসহ ফর্ম পিছু ফেলার জন্য সেটি যথেষ্ট কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন যথেষ্ট রয়েছে সবার মাঝে। মোহাম্মদ মিঠুন ওই সিরিজের দুটি ম্যাচেই ফিফটি করেন। তবে প্রিমিয়ার লিগে ছয় ম্যাচ খেলেও এখনো ফিফটির দেখা পান নি। সাব্বির রহমান সেঞ্চুরি করেছিলেন কিউইদের বিপক্ষে। কিন্তু প্রিমিয়ার লিগের ১০ ম্যাচের মধ্যে যখন সর্বোচ্চ ইনিংস ৬১ রানের, তখন আর কি করতে পারবেন তা নিয়েও প্রশ্ন ওটে।
ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ফর্ম নিয়ে শুধু বিশ্বকাপে যাচ্ছেন মোসাদ্দেক হোসেন। প্রিমিয়ার লিগে আবাহনীর হয়ে ভালো ইনিংস উপহার দিয়েছেন তিনি। বিশ্বকাপ স্কোয়াডের ৯ ব্যাটসম্যানের মধ্যে ভালো ফর্মে রয়েছেন মোসাদ্দেক, যদিও তার জাতীয় দলের শেষ ম্যাচ গুলার স্মৃতি তিনি ভুলতে চাইবেন।
এই অবস্থায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অতীতের পারফরম্যান্স কথা বিবেচনায় রেখে এই ব্যাটসম্যানদের উপেক্ষা করতে পারেননি বলে জানালেন হাবিবুল- “আমাদের সব ব্যাটসম্যান পরীক্ষিত। নিউজিল্যান্ড সিরিজ ও প্রিমিয়ার লিগ বাদ দিয়ে গত বছর দুয়েকের হিসাব নিলে দেখবেন, ওরা অনেক ভালো রান করেছে। এমন ব্যাটসম্যানদের ফর্মে ফেরার জন্য খুব বেশি সময়ের প্রয়োজন পড়ে না। আমরা খুব ভাগ্যবান যে ত্রিদেশীয় সিরিজে অন্তত চারটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাব। সেখানে এই ব্যাটসম্যানরা ফর্মে ফিরবে বলে আমাদের আশা।”